সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানেন? পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে যেখানে একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে পারবেন মাত্র ১০০০ টাকায়, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো এই যে যেখানে এক দেশে এক হাজার টাকায় গাড়ি কিনতে পারবেন! সেখানে ইউক্রেনে খাবার কিংবা থাকার জায়গা তো দূরের কথা ১০০০ টাকায় নিজের শরীর ঢাকার জন্য কাপড়টুকুও কিনতে পারবেন না।
আর এমনটা হওয়ার কারণ কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, বরং আগে থেকে ইউক্রেনে এরকম সব পণ্যের দাম আকাশচুম্বী এতটাই যে একটা জিন্স প্যান্টের দাম চার হাজার টাকা আর একটা নরমাল টি-শার্ট এর দাম ৩০০০ টাকা।
এত হাই প্রাইস হওয়ার পরেও ইউক্রেনে প্রতি বছর ১ কোটি বিদেশি নাগরিক ভ্রমণ করতে আসেন, তাহলে এখন এই প্রশ্ন মনে আসতেই পারে ইউক্রেনে এমন কি আছে যার কারণে প্রতিবছর এত টুরিস্ট কে আকর্ষণ করে এত ভাইবহুল দেশ হওয়ার পরেও।
আর কোন দেশেই বা ১ হাজার টাকায় একটি গাড়ি কিনতে পাওয়া যায়?
তো চলুন বিশ্ব ভ্রমণ করে দেখে আসা যাক আমাদের ১ হাজার টাকায় আপনি কোন দেশে কি কি করতে পারবেন।
১- ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো বা আমেরিকার সাথে পরিচিত হয়েছে হলিউড মুভির মধ্যে দিয়ে! যে মুভিগুলোর মধ্যে আমরা আমেরিকার সৌন্দর্য আর বিশাল শহর অসাধারণ টেকনোলজি আবিষ্কার বিলাসবহল জীবন সুস্বাদু খাবার এগুলোই দেখে আসছি।
আর এগুলো বারবার দেখেও আমাদের এমন লাইফস্টাইল আর এমন জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা হয় না বললেও মিথ্যা বলা হবে।
আর এসব কিছু মিলিয়েই আমেরিকা আমাদের স্বপ্নের একটি ডিস্টিনেশন! কিন্তু আপনি কি জানেন সেই স্বপ্নের দাম কিরকম? আপনার সেই হলিউড স্বপ্নের কথা যদি বলি তাতে প্রবেশ করতেই আপনাকে প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ করতে হবে, অর্থাৎ প্রায় ১০৩ ডলার।
কিন্তু আমরা যে ১০০০ টাকার কথা বলছি তা ডলারে মোটামুটি ১০ ডলারের কাছাকাছি, যেটি দিয়ে আপনি সর্বোচ্চ একটি মুভি টিকিট কিনতে পারবেন।
এবং সেই সাথে মুভিটি দেখার সময় হয়তো ২.৭ ইউ এস ডলার দিয়ে একটি চিজ বার্গার খেতে পারবেন। এইতো ২ ঘন্টার একটা মুভি আর একটা বার্গার এটি করতে গিয়েই আপনার ১ হাজার টাকা শেষ।
এখন নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে আমেরিকা এত ব্যয়বহল কেন? এর মূল কারণ আমেরিকান ডলার।
আমেরিকান ডলার বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী কারেন্সি, যেটি চাহিদা অন্যান্য কান্ট্রিতে অনেক বেশি।
আর আমেরিকার এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট এর চাইতে অনেক বেশি, আমেরিকার ডলার এতটাই শক্তিশালী যে সেটাকে ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ধরা হয়।
২- কানাডা
কানাডাতে আমাদের দেশের ১ হাজার টাকার মূল্য ১৩ কানাডিয়ান ডলার, বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতিতে এই রেট হয়তো আরো কমে গিয়েছে।
এটা শুনে নিশ্চয়ই কানাডার স্বপ্ন পাখির মত উড়ে গেল তাই না?
কারণ প্রকৃতির সুন্দরী ,ভজন রসিকদের দেশ, আর কানাডার নর্দান লাইট কোনটাই দেখা সম্ভব নয় এই ১০০০ টাকায়।
যদিও ইয়াং বয়সি ভ্রমণ পিপলস দের জন্য ট্রান্স কানাডিয়ান ট্রেইলে ওঠা একদম ফ্রি, ঘোরাঘুরি ছেড়ে যদি ভুলেও একবার মুভি দেখার কথা ভাবেন তাহলে এখানে প্রতিটা টিকিটের পেছনে আপনাকে খরচ করতে হবে ১৪ কানাডিয়ান ডলার। যেটি টাকা হিসাব করলে ১ হাজার টাকারও বেশি।
আপনার পানি কিনতে খরচ হবে ১.৮৭ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২০০ টাকার কাছাকাছি।
আর আপনি যদি ১০০০ টাকা নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাওয়ার চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে থালাবাসন ধুয়ে নিশ্চিত বের হয়ে আসতে হবে।
কারণ কানাডায় এভারেজ একজন ব্যক্তির রেস্টুরেন্টের খাবার বিল প্রায় সাড়ে ১৮ ডলার! আরো সৌখিন ব্যাপার হল তিন ভাগের এক ভাগ কানাডিয়ান সপ্তাহে একদিন বাইরে খাই অর্থাৎ আরো সহজ করে বললে ২৪% লোক সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার রেস্টুরেন্টে খাই ৯% কানাডিয়ান তিন থেকে ৬ বার খাই আর ২% প্রতিদিনই খাই।
এগুলো শুনে আপনি ভাবতেই পারেন সেখানকার মানুষগুলোর ইনকাম অনেক বেশি! আমাদের দেশের মানুষও কিন্তু পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের ৭% মানুষই বাইরে খাই অর্থাৎ রেস্টুরেন্টে।
এখন নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন আসছে কানাডিয়ার অর্থনীতি এত স্ট্রং কিভাবে? এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হল হাই এক্সপোর্ট।
এক্সপোর্ট এ বিশ্বে ১২ তম ইকোনমিক কানাডার, কানাডার ইনপুটেড চাইতে এক্সপোর্ট বেশি! আর সবচাইতে বেশি পজিটিভ ব্যাপার হলো কানাডার সবচাইতে বেশি এক্সপোর্ট করে আমেরিকায়, যার ফলে কানাডার ডলারের রেট সব সময় সমান থাকে যা কানাডার ইকোনমিক্স এ আরো বেশি ব্যালেন্স রাখে।
২০১৫ সাল পর্যন্ত কানাডার ডলারেটে মুদ্রাস্ফীতি ছিল মাত্র ১.০৬ পার্সেন্ট যা কানাডার অর্থনীতিকে আরো স্ট্রং রাখতে সাহায্য করেছে।
৩- দক্ষিণ কোরিয়া
আপনি যদি স্কুইট গেম মুভি দেখে থাকেন তাহলে বর্তমানে বিভিন্ন ভাইরাল ভিডিও দেখে আপনি অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে ফেলেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং সেই সাথে সেখানকার খাবার আপনার জিভে জল এনে দিবে।
এটি দেখে আপনি ছিনতায় পড়ে যেতেই পারেন যে আমাদের দেশের এক হাজার টাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ১৩৫৮ Won কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের দেশের চাইতেও ৬৫% বেশি এক্সপেন্সিভ এজন্যই দক্ষিণ কোরিয়াতে এক বেলার রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেলে আপনার খরচ হবে ১৫ হাজার ওন অর্থাৎ ১১০৬ টাকা।
আর ঘুরে বেড়ানোর চিন্তা বাদ ই দেয়া উচিত কারণ এখানে একদিন ঘুরতে গেলে আপনার বাজেট অন্তত ১৭২২৭ ওন থাকতে হবে যা এক হাজার টাকার বেশি।
শুধু কেপেপোরের জন্য নয় বরং সবচেয়ে সাশ্রয়ী কিন্তু বেস্ট সার্জারির জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত এই দক্ষিণ কোরিয়া।
এখানকার সবচাইতে কম খরচের সার্জারি যা চোখের পাতায় করা হয় আর এতেই ব্যয় হয় প্রায় এক লক্ষ টাকার আশেপাশে।
আপনার মনে হতেই পারে এই দেশে এমন কি আছে যার জন্য সবকিছুর দাম এত বেশি?
এর মূল কারণ হলো দুর্নীতি আর কম প্রাকৃতিক সম্পদ! কিন্তু এছাড়াও আরো একটি বড় কারণ হলো মুদ্রাফিতি মূলত উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্য সংঘটিত যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর টাকার ফ্লোর ঠিক রাখতে তারা প্রচুর পরিমাণ টাকা উৎপাদন শুরু করে যেটি যুদ্ধের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ৭২ পার্সেন্ট ছিল আর প্রথম ছয় মাসে ৯০%
যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যদিও ইউএসএ দক্ষিণ কোরিয়া কে প্রচুর সাহায্য করে! তবুও মুদ্রাস্ফীতির কারণে এতটা খারাপ হয়েছে যে সেটি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া।
৫- চীন
এক মহাপুরুষ বলেছিলেন মেয়েদেরকে একটা জিনিসই খুশি করতে পারেন আর তা হল ব্যাগে লাগানো প্রাইস ট্যাগ। হ্যাঁ প্রায় সব মেয়েই তার এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে তবে এর জন্য তাকে চিনে যেতে হবে, যেখানে আপনি পেয়ে যাবেন ১০০০ টাকায় অর্থাৎ ১৩ দশমিক ১৭ ইউওয়ানে আপনার স্বপ্নের ব্যাগগুলো, যেটির স্বপ্ন আপনি সবসময় দেখে আসছেন।
ডিজাইন লোগো সবকিছু একরকম আর চীন শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদেরও খেয়াল রাখে! আর তাই তো আপনি চীনে কিনতে পারবেন মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে নিউ নাইকি নিউ কনভারস সু বুঝতেই পারছেন কপাল ভালো থাকলে এগুলো চাঁদ পর্যন্ত টিকতে পারে আর কপাল মন্দ হলে রাত পর্যন্তই।
কারণ এগুলো ডুবলিকেট পণ্য আর এই গুলো দেখতে এতটাই রিয়েল মনে হয় যা দেখে বড় বড় ব্রান্ডের অনারাও যেন ধোঁকা খেয়ে যাবে! সত্যি কথা বলতে চাইনিজদের জন্য যেন কপিরাইটের অর্থ কপিরাইট ই।
আর এটি করে সবার মনে একটাই প্রশ্ন উদয় হয় চীন কেন তাদের গলায় কপি কাটের বেন ঝুলিয়ে রাখতে চাই! আসলে চাইনিজদের কপি করা কি কোন অপরাধ মনে হয় না তারা কপি করাকে একটা আর্ট মনে করে।
আর তারা কপিকে একটা আর্টের পর্যায়ে নিয়েও গিয়েছে! যেখানে বহির্বিশ্ব বাচ্চাদেরকে এবিসিডি ওয়ান টু থ্রি এগুলো শিখানো হয় সেখানে চীনের বাচ্চাদেরকে কপি করা শিখানো হয়।
আসলে এমন প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা কে জানে Chinese educational system has long been based on rote Lee learning rather than encolouraing originally of infection
অর্থাৎ আমাদের দেশে যেখানে বাচ্চাদেরকে ন্যায় অন্যায় শেখানো হয় সেখানে চাইনিজরা তাদের বাচ্চাদের শিক্ষকদেরকে কপি করতে শিখতে বলে! আর সেজন্যই ২০১২ সালে একটি ই কমার্স ওয়েবসাইটে দেখা যায় তাদের ওয়েবসাইটের ৯০% নাইকি জুতো ফেক ছিল।
চিন এ আপনি স্টারবার্গ কফির পরিবর্তে আপনি স্টার বক্স কফি পেয়ে যাবেন।
৬- ইউক্রেন
যুদ্ধে জড়ানো এই দেশটি নিয়ে বলার আগে এটি জানিয়ে দিই যে আমাদের ১ হাজার টাকা ইউক্রেনে ৩৪৯ ইউনিয়া!
তবে ইউকেন তাদের অসাধারণ স্থাপত্য সুস্বাদু খাবার আর সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত আর এসব কিছুর জন্যই দাম প্রায় আকাশচুম্বী ইউক্রেন এ আপনি একটা জিন্স ও ১০০০ টাকা কিনতে পারবেন না।
কারণ এখানে একটা জিন্সের দাম ই ১৫৮৮.৭৯ ইউনিয়া যেটি প্রায় ৪৫০০ টাকা।
কিন্তু তবুও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের পূর্বে প্রতিবছর অসংখ্য লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য আসতো কেন? হয়তো জীবন সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা টাকা খরচ করে হলেও অমন জীবনযাত্রা কেয়ার ফ্রি লাইফ পার করা তাদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।
আবার কিছু মানুষ এমনও হয় যারা টাকা সেভ করাকে অনেকটা বেশি প্রাধান্য দেয়! ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটি তাদের কাছে অনেক বেশি প্রাধান্য পায়।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন আর আপনি যদি এমনি আনকমন এবং ইন্টারেস্টিং পোস্ট প্রতিনিয়ত পড়তে চান তাহলে ওয়েবসাইটটি সেভ করে রাখুন ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ